বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন

কোটি টাকার কুঁচে নিয়ে বিপাকে খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা

এস.এম. সাঈদুর রহমান সোহেল ও সৈয়দ লেমন, খুলনা ব্যুরো::

করোনা’র ছোবলে লকডাউনে পড়ে কোটি টাকার কুঁচে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে রপ্তানি করতে না পারায় এখন মরতে বসেছে জীবন্ত কুঁচেগুলো। এতে একদিকে কুঁচে সংরক্ষণ ও খাবারের যোগান, অন্যদিকে বিক্রি না হওয়া এবং মরে যাওয়ায় প্রায় কোটি টাকা লোকসানের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ রকমই ক্ষতির মুখে পড়ে দিন গুণছেন খুলনার পশ্চিম রূপসা অ্যাপ্রোচ রোডের লাবু ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী কুঁচে সরবরাহকারী ও কমিশন এজেন্ট মো. অহিদুজ্জামান লাবু। বিক্রি করতে না পারা এবং প্রতিদিনই চোখের সামনে জীবন্ত কুঁচেগুলোর মৃত্যু তাকে যেন উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ কারণে এক প্রকারে হা-হুতাশ করছেন তিনি। কিন্তু কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।

ব্যবসায়ী লাবু বলেন, তার ডিপোতে ৬ টন কুঁচে মজুদ রয়েছে। কেজি প্রতি ৩শ’ টাকা হলেও যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। কুঁচেগুলো প্রতিদিন পরিচর্যা করছে ৩/৪ জন কর্মচারী। তিনি বলেন, ২৪ জানুয়ারী সর্বশেষ চিনে কুঁচে রপ্তানি হয়। পরে সেখানে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পরই লকডাউনের কারণে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তখন তার ডিপোতে ১২ টন কুঁচে মজুদ ছিল। কিন্তু দীর্ঘ তিন মাসেরও অধিক সময় রপ্তানি করতে না পারায় ইতিমধ্যেই ৬ টনের মত কুঁচে মারা গেছে। বর্তমানে ৬ টন মজুদ রয়েছে।

এ অবস্থায় চরম আর্থিক ক্ষতির আশংকা করে ব্যবসায়ী অহিদুজ্জামান লাবু আরও বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৮ লাখ টাকা লোন এবং লাখ লাখ টাকা ধার-দেনা করে প্রতি কেজি কুঁচে ৩শ’ টাকা করে ক্রয় করেন তিনি। কিন্তু বিক্রি না থাকায় বর্তমানে তা ২শ’ টাকা কেজিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তারপরও রপ্তানিকারকরা তাদের কাছ থেকে কিনছেন না। এ অবস্থায় কি করবেন- ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

এভাবে ব্যবসায়ী অহিদুজ্জামান লাবু একানন, খুলনাঞ্চলে তার মত বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী ও চাষি চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহজশর্তে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থার দাবি উঠেছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের বাগেরহাট, মোল্লাহাট, ফকিরহাট, খুলনার রূপসা, তেরোখাদা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়াসহ খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার খাল-বিল থেকে ধরা হয় কুঁচে, অনেকে খামারে চাষও করেন। এসব কুঁচে ঢাকার ব্যবসায়ীরা সরাসরি কিনে চীনসহ পার্শবর্তী বিভিন্ন দেশে রফতানি করেন। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে আমদানি বন্ধ করে দেয় চীন। এ কারণে অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খুলনা অঞ্চলের খামারিরা হতাশার সুরে জানান, যে কুঁচে কেজি প্রতি ৩শ’টাকা থেকে ৪শ’ টাকায় বিক্রি হতো, সেই কুঁচে এখন ২শ’ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ী ও খামারিরা কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না।

পাইকগাছার প্রিয়াংকা ডিপোর মালিক বকুল কুমার মন্ডল জানান, প্রতিদিন নূন্যতম ১টন কুঁচে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু সরবরাহ করতে না পারায় ড্রামে মজুদকৃত কুঁচে ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। মফিজুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে চীনে কুঁচে রপ্তানি হচ্ছে না। ঢাকার রপ্তানিকারকরাও মজুদ কোনো মাল নিচ্ছে না। ফলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

ব্যবসায়ী জামাল শেখ জানান, বিক্রি না হওয়া খামারগুলোতে কুঁচের স্তূপ তৈরি হয়েছে। এই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ রপ্তানিযোগ্য কুঁচে মারা যাচ্ছে। এতে লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ লাইভ এ্যান্ড চিল্ড ফুড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, সম্প্রতি চীনে আবারও কুঁচে রপ্তানি শুরু হয়েছে। সরকারও চাচ্ছে রপ্তানি হোক। কিন্তু লকডাউনের কারণে নানা প্রতিকুলতায় সেটি পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা প্রান্তিক চাষিদের বিষয়টি মাথায় রেখে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।

মৎস্যমাণ নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরা’র সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরের (২০১৯-২০) প্রথম পাঁচ মাসে কুঁচে রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। রপ্তানি হওয়া কুঁচের ৯৫ ভাগের বেশি রপ্তানি হয় চীনে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com